কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ও আবেদনের নিয়ম
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ও আবেদনের নিয়ম আজকের আর্টিকেলে আপনি কিভাবে
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করবেন এর খরচ কত, কি কি কাগজপত্র লাগে ও
প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয় এ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা
করব।
ইউরোপের অন্যতম দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম একটি বৃহৎ দেশ প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ
মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে এই দেশে পাড়ি জমাচ্ছে কানাডা
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া ও খরচ সহ বিস্তারিত গাইডলাইন ফেটে আমাদের
এই আর্টিকেল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পেইজ সূচিপত্র: কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ও আবেদনের
নিয়ম
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি:
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হল এমন একটি ভিসা যা আপনাকে কানাডাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের
জন্য কাজ করার অনুমতি প্রদান করে থাকেন
এটি মূলত বিদেশী কর্মীদের জন্য যারা কানাডাতে কোন নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনে
কাজ করতে চান তাদের জন্য এই ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রয়োজন হয়।
যারা কানাডিয়ান নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা নয় এবং সেই ব্যক্তি কানাডায়
বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে আগ্রহী হন তাকে অবশ্যই সেই দেশের বা কানাডার ওয়ার্ড
পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় এমনকি আপনি যদি কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
একজন আন্তর্জাতিক ছাত্র হয়ে থাকেন তবুও ওয়ার্ক পারমিটের কাজের জন্য আপনার
অবশ্যই কানাডিয়ান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হবে বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার
জন্য আবেদন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রকারভেদ প্রকারভেদ :
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হল কানাডিও সরকারি অনুমোদন যা বাহিরের দেশের নাগরিকদের
কানাডায় বৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ করে দেয়।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে
a. ওপেন ওয়ার্ক পারমিট(Open work permit ): ওপেন ওয়ার্ক পারমিট হচ্ছে নির্দিষ্ট
কোন নিয়োগ কর্তার মাধ্যমে কাজের সুবিধা। এটি নির্দিষ্ট করে কোন কোম্পানির বা
নির্দিষ্ট কোন পেশার কাজের মধ্যে আপনাকে বাধ্য থাকতে হবে না এর মাধ্যমে
আপনি বিভিন্ন ধরনের চাকরির অনুসন্ধান করতে পারবেন।
b. এমপ্লোয়ার প্যাসিফিক ওয়ার্ক পারমিট(Employer Pacific work permit ) এই
এম্পিয়ার প্যাসিফিক ওয়ার্ক পারমিট ভিসা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনে
কাজ করার অনুমতি দেয় এই ভিসার মাধ্যমে আপনি যে কোম্পানিতে কাজ করবেন সেখানে
বৈধভাবে কর্মরত থাকতে হবে এর জন্য আপনাকে নিয়োগ কর্তার থেকে একটি অফার লেটার বা
কাজের প্রস্তাবের প্রয়োজন হয়।
কানাডায় জব খুঁজে পাওয়ার উপায় :
কানাডায় জব খুঁজে পাওয়ার অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে একটি মাধ্যম হল
অনলাইন মাধ্যম বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। যেমন www.indeed.com ,www.job
bank.com,www.linkdln.com এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনি কানাডায় বিভিন্ন
কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের জব খুঁজে পেতে পারেন অতি সহজেই।
উপরের দেওয়া যেকোনো ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট ভাবে বা সঠিকভাবে
আপনার সম্পূর্ণ তথ্য বা বায়োডাটা সাবমিট করতে হবে তারপর আপনার আবেদনের
প্রেক্ষিতে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার ইন্টারভিউ নেওয়া হবে আপনি যদি তাদের কাছে
যোগ্য মনে হন তাহলে Laboure market impact assessment (LMIA) আবেদন করতে
হবে।
আবেদন করার পর আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করেছেন সে কাজের জন্য যোগ্য কিনা তা
সরকার বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে পর আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন এর অনুমতি দেওয়া
হবে। প্রথমে আপনাকে এক থেকে তিন বছর মেয়াদী ওই দেশের সরকার ভিসা দিয়ে থাকে
পরবর্তীতে আপনি আপনার সুবিধা সময়ে ওই দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এইভাবেই আপনি বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করার পর কানাডায় একটি জব খুঁজে পেতে পারেন এবং
স্থায়ীভাবে বসবাসের একটি সুযোগ করে নিতে পারবেন ।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদনের নিয়ম ঃ
কানাডা জব ভিসা আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে canada.ca সরকারি অফিসিয়াল
ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে তারপর ইমিগ্রেশন এন্ড সিটিজেনশিপ অপশনে ক্লিক করতে হবে
তারপর ওয়ার্ক সিলেক্ট করতে হবে তারপর গেটে ওয়ার্ড ফরমেট লেখার উপর ক্লিক করে
সকল ধাপ অনুসরণ করে ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য নিচের কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে
প্রাথমিক যোগ্যতা:
আপনি কানাডায় কোন কোম্পানিতে জব করতে চাইলে সেই কোম্পানির প্রয়োজনীয় কিছু
যোগ্যতার প্রয়োজন হতে পারে সেই যোগ্যতা গুলো বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের
হতে পারে যে কোম্পানিতে আপনি আবেদন করবেন সেই কোম্পানিতে যে যোগ্যতা গুলো চাওয়া
হবে সে যোগ্যতা থাকতে হবে।
লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট:
আপনি যদি এম্প্লয়ের প্যাসিফিক ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেন তবে নিয়োগ
কর্তাকে একটি লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রাপ্ত করতে হবে এটি একটি
যাচাই প্রক্রিয়া যা নিশ্চিত করে যে কানাডার একজন বিদেশী কর্মী নিয়োগ করার আগে
স্থানীয় কর্মীদের জন্য কাজের সুযোগ নেই
- ভিসা আবেদন :
লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট পাওয়ার পর আপনি কানাডা ওয়ার্ক পারমিট
ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন সেজন্য আপনাকে ইমিগ্রেশন রিফিউজ এবং সিটিজেন সেফ
কানাডা এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে এখানে
আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পাসপোর্ট ছবি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা
দিতে হবে
- সঠিক ডকুমেন্টস প্রদান:
আপনার আবেদনপত্রের সাথে অবশ্যই সেই তথ্যগুলো বা ডকুমেন্টগুলো সংযুক্তি করতে হবে
তা অবশ্যই সঠিক হতে হবে ।
- সাক্ষাৎকার প্রদান:
তারপর আপনার একটি সাক্ষাৎকার প্রয়োজন হতে পারে এর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আপনাকে
নির্বাচিত করা হবে ওই দেশের কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের অর্থাৎ যে কাজের জন্য আপনি
ভিসার জন্য আবেদন করেছেন সেই কাজের উপরে আপনার একটি সাক্ষাৎকার প্রয়োজন হতে
পারে।
- ভিসা অনুমোদন:
আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর কানাডা সরকার
আপনার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অনুমোদন দিবেন যদি আপনার আবেদন গ্রহণ করা হয় তবে
আপনি একটি কাজের জন্য অনুমতি নিয়ে কানাডায় যেতে পারবেন।
কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ:
কানাডায় যাওয়ার সম্পূর্ণ খরচ নির্ভর করে কানাডার ভিসা ক্যাটাগরির উপর এছাড়াও
আরো অনেক কিছুর ওপর খরচ নির্ভর করে যেমন কানাডার ভিসার খরচ সাধারণত কানাডার
বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলের উপর ভিত্তি করেও কম বেশি হয়ে থাকে যে সকল খরচ করতে
হবে।
এছাড়াও বিমান টিকিট, হোটেল ফি, এজেন্সি ফি , পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর পুলিশ
ক্লিয়ারেন্স মেডিকেল রিপোর্ট , ভিসা প্রসেসিং ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ সহ প্রায় ৯
থেকে ১০ লক্ষ টাকার মত লাগতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কানাডার
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেল
দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী নিজে নিজেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে সব ধরনের
ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে পারেন তাহলে অল্প টাকায় কানাডার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার
খরচে যেতে পারে।
ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী আনুমানিক খরচ নিচে দেওয়া হল ঃ
টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে আনুমানিক চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা লাগতে পারে
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১২ লক্ষ (বিভিন্ন এজেন্সের ক্ষেত্রে টাকার
পরিমাণ আরো কম বেশি হতে পারে)
কৃষি ভিসার ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ লক্ষ/ টাকা খরচ হতে পারে ।
আরো পড়ুনঃপাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সৌদি ভিসা চেক করার সহজ উপায়
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার পর সুযোগ সমুহঃ
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার পর আপনি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন যে
সুযোগ সুবিধা গুলো আপনার জন্য রয়েছে সেগুলো নিচে তুলে ধরাঃ
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট আবেদনের উল্লেখিত নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করার সুবিধা
- আপনার পরিবারসহ থাকার সুবিধা।
- কানাডায় বসতি স্থাপনের সুবিধা।
- কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের সুবিধা।
- অবসর সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
- বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
- যোগ্যতার ভিত্তিতে PR ভিসার আবেদন করতে পারবেন
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সমূহ:
যেকোনো আবেদন করার সময় যেমন অনেকগুলো বা কতগুলো ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয় ঠিক
তেমনি কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস এর
প্রয়োজন হয,নিচে যে সকল তথ্য বা ডকুমেন্টসের প্রয়োজন তা তুলে ধরা হবে
বৈধ পাসপোর্ট কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদী ।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ।
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ ।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্র ।
- IELTS সার্টিফিকেট যার সর্বনিম্ন স্কোর ৬ হতে হবে ।
- বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে ।
- ব্যাংক একাউন্ট স্টেটমেন্ট ।
- কাজের অভিজ্ঞতার সনদ ।
- মেডিকেল রিপোর্ট ।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ।
- অনলাইন ফি পরিশোধ রশিদ ।
- সদ্য তলা ছবি।
সরকারিভাবে কানাডায় যাওয়ার উপায় :
সরকারিভাবে কানাডায় যাওয়ার জন্য আপনাকে বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে যেমন ধরুন
অনলাইনে আবেদন, অনলাইনে সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। প্রথমে আপনাকে কানাডার সরকারের
সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www. canada.ca প্রবেশ করতে হবে তারপর ইমিগ্রেশন এন্ড
সিটিজেন্সি অপশনে ক্লিক করতে হবে তারপর work অপশনে ক্লিক করার পর get a
work permit লিখার উপর ক্লিক করে, work permit পূরণ করতে হবে। তারপর আপনার সমস্ত
যে সকল তথ্য চাইবে সে সকল তথ্য দিয়ে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। সকল তথ্য পূরণের পর
সাবমিট করুন। এভাবে পরবর্তী ধাপগুলো অনুসরণ বা পূরণ করার পর আপনি সরকারিভাবে অল্প
কিছু টাকা খরচের মাধ্যমে কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃAi দিয়ে ভিডিও তৈরির উপায়
ইতিকথাঃ
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ও আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে খুব
ভালো ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ,আশা করছি আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারছেন।
পাঠক সর্বশেষ আপনাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই যে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে
মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কিভাবে আবেদন করতে হয়
খরচ কত ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের আরাও আপডেট পোস্ট পড়ার জন্য ভিজিট করুন www.smartzonbd.com



স্মার্টজোনবিডির নীতি মালা মেনে কমেন্ট করুননীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url