মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার-নতুন ফোন কিনার আগে যা যাচাই করা উচিত

মোবাইলে ট্রেনের অগ্রীম টিকিট কাটার নিয়ম

আপনি কি একটি ফোন কেনার কথা ভাবছেন? নতুন মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার? ফোনের বাজেট, ফোনের স্টোরেজ, যেমন, র‍্যাম, রোম, ক্যামেরা রেজুলেশন, ডিসপ্লে রেজুলেশন, ও প্রসেসর যাচাই করে আপনার ব্যবহারের জন্য সেরা স্মার্টফোনটি বেছে নেওয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 

বর্তমান ডিজিটাল যুগের স্মার্টফোন এখন শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, স্মার্ট ফোন দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বর্তমান বাজারে অনেক ধরনের মডেল ও ফিচারের মধ্য থেকে আপনার জন্য সঠিক স্মার্টফোন কোনটি, তা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন কাজ। তাই প্রতারিত না হয়ে সঠিক ফোন কেনার জন্য আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটি ধাপে ধাপে মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন। যাতে করে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

নতুন মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার,এই জন্য আপনাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশ্লেশন করতে  হবে। কেননা প্রতিনিয়তই প্রযুক্তি এখন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তাই আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি ফোন কেনার জন্য আপনাকে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের জন্য আমরা ব্যবহার করি না। বর্তমানে একটি স্মার্ট ফোন দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে। তাই একটি স্মার্ট ফোন কেনার আগে আমাদেরকে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কিনা উচিত হবে। ভুল ফোন কিনে পস্তানোর চেয়ে, কেনার আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। 

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব মোবাইল কিনার আগে যা জানা দরকার, যাতে করে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারেন। আর এই সঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়ার জন্য তেড়ে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন, আর চলুন জেনে নেই নতুন ফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো আমাদের জানা উচিত। 

আপনি যদি একটা স্মার্ট ফোন কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে একটি বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। আপনি ফোনটি কেনার জন্য কত টাকা খরচ করতে প্রস্তুত আছেন। আপনার বাজেট যদি বেশি  হবে আপনার ফোন ও তত ভাল মানের হবে। তাই আপনার ফোনটি ঠিক আছে ব্যবহার করতে চান তার ওপর নির্ভর করে আপনি একটি বাজেট নির্ধারণ করতে পারেন। 

বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ফোন রয়েছে, লো কোয়ালিটির,মিডিয়াম কোয়ালিটির এবং হাই কোয়ালিটির। আপনি যদি শুধুমাত্র কল আদান-প্রদান এবং এসএমএস করার জন্য মোবাইল দরকার হয় তাহলে আপনি অল্প বাজেটের মধ্যেই একটি ফোন কিনতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন আপনার ফোন দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং করা, কিংবা গেমিং করা প্রয়োজন হবে, তাহলে উনি মিডিয়াম কোয়ালিটির অথবা হাই কোয়ালিটির মানের একটি ফোন পছন্দ করতে পারেন। 

আপনি যখন একটি স্মার্ট ফোন কেনার কথা ভাববেন ,তখন অবশ্যই যে কাজটি আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ,সেটি হলো সেই স্মার্টফোনের র‍্যাম ও প্রসেসর সম্পর্কে। একটি স্মার্টফোনের গতি ও কার্যক্ষমতা নির্ভর করে সেই ফোনের প্রসেসর এবং র‍্যাম এর উপর ভিত্তি করে।  স্মার্টফোনের র‍্যাম ও প্রসেসর যত বেশি হবে সেই স্মার্টফোনটি কার্যক্ষমতা ও গতি তত বেশি হবে।

আপনি যদি গেমিং এবং মাল্টি টাস্কিং হিসেবে কাজ করতে চান তবে আপনাকে কোয়ালকম, স্ন্যাপড্রাগন বা মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি এর মত শক্তিশালী চিপসেট যুক্ত স্মার্টফোন পছন্দ করতে পারেন। কারণ এই প্রসেসর যুক্ত স্মার্টফোন এর কার্যকারিতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। ভালো পারফরমেন্সের জন্য অবশ্যই সর্বনিম্ন ৪ জিবি  র‍্যাম থাকলে ভালো হয়, এছাড়াও খুব বেশি কার্যকারিতার পারফরমেন্স যুক্ত স্মার্টফোন চাইলে ৬ থেকে ৮ জিবি র‍্যাম থাকতে হবে। 

বর্তমান যুগে স্মার্ট ফোন মানে সেলফি তোলার আয়োজন করা।  আপনি যদি একজন ফটোগ্রাফার হন বা সেলফি তুলতে আপনি খুব ভালোবাসেন, তাহলে মোবাইল ফোন কেনার আগে আপনাকে স্মার্টফোনের ক্যামেরার কোয়ালিটি দেখে নিতে হবে। 

এইজন্য আপনার ফোনে একাধিক ক্যামেরা, আপডেট ফিচার যেমন নাইট মোড, পোর্টেট মোড, ইত্যাদি থাকলে ছবি তোলা ও ছবির মান অনেক ভালো হয়ে থাকে। আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরার মেগাপিক্সেল এর সংখ্যা যত বেশি হবে ছবির মান তত ভাল হবে, আরেকটি জিনিস খেয়াল রাখা উচিত যে মেগাপিক্সেলের সংখ্যা শুধু বেশি থাকলেই হবে না, তার সাথে লেন্সের মান এবং অ্যাপারচার সঠিক থাকতে হবে। ক্যামেরার অ্যাপারচার যত কম হবে, কম আলোতেও তত ভালো ছবি উঠবে। 

একটি স্মার্টফোনের  ডিসপ্লের সাইজ কেমন হবে তা আপনার ওপরই সেটি নির্ভর করবে। তবে ডিসপ্লের জন্য যে বিষয়টি আপনাকে যাচাই করতে হবে সেটি হল এর টাচ স্ক্রিন ও রেজুলেশন। এছাড়াও বর্তমানে আপডেট ডিসপ্লের গুলো হল এমোলেড (AMOLED) বা(OLED) ডিসপ্লে। যা সাধারন (LCD) ডিসপ্লে এর চেয়ে অনেক ভালো। তবে আপনাকে আরেকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে ডিসপ্লের রেজুলেশন যেন (Full HD+) এবং রিফ্রেস রেট (90 Hz বা 120Hz) হয়। এছাড়াও ফোনটি হাতে ধরে কেমন স্বাচ্ছন্দ মনে হচ্ছে এবং এটি কতটা মজবুত সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। 

এছাড়াও স্ক্রিন প্রটেকশন এর জন্য (Gorilla glass) থাকলে ফোনের স্থায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।

স্মার্টফোন কেনার আগে আপনার যে জিনিসটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল ব্যাটারির ব্যাকআপ । বিশেষ করে উনি যদি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা দেখে নিতে হবে। কমপক্ষে ৪০০০ mAh থেকে ৫০০০ mAh বা তার বেশি mAh থাকতে হবে। ছাড়াও দ্রুত চার্জিং (Fast Charging) সুবিধা আছে কিনা সেটিও চেক করে নিতে হবে। 

নতুন ফোন কেনার সময় আপনাকে আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে ডিভাইসটি কয় বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট ও এন্ড্রয়েড আপডেট দিতে পারে। কারণ প্রতি বছরে অপারেটিং সিস্টেমগুলো বিভিন্ন কোম্পানি আপডেট করতে থাকে। Samsung, OnePlus,pixel , Xiaomi ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত আপডেট দিয়ে থাকে। 

স্মার্ট ফোন কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে কিছু ভালো ব্র্যান্ড পছন্দ করতে হবে। এবং পাশাপাশি সেই ব্রান্ড গুলোর সার্ভিস সাপোর্ট কেমন সেগুলো জেনে নিতে হবে। যাতে করে আপনি ফোন কেনার পরে ,যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে অতি সহজেই সেই ব্র্যান্ডের কাস্টমার কেয়ার থেকে সারিয়ে নিতে পারেন। বাংলাদেশে যে ব্র্যান্ডগুলো বর্তমানে সবচেয়ে টপ লেভেলে রয়েছে সেগুলো হল, Samsung, OnePlus, Xiaomi, realme, redmi, Vivo, oppo, infinix, Nokia, Motorola, ইত্যাদি। এছাড়াও যারা বেশি বাজেটের মধ্যে চিন্তাভাবনা করেছেন তাদের জন্য  iphone এর সর্বশেষ আপডেট সিরিজের ফোন নিতে পারেন। 

আপনি যদি নতুন ফোন কেনার চিন্তা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ফোন কিনার আগে আপনার উচিত হবে সেই ফোনটি অফিসিয়াল কিংবা আমি অফিসিয়াল সেটি চেক করে নেওয়া। কারণ আপনি যদি অফিসিয়াল ফোন কিনেন তাহলে প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে সঠিক ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয় তোর সেবা পাবেন।

 কিন্তু আপনি যদি আনঅফিসিয়াল ফোন কিনে থাকেন তাহলে সেটি কিছুটা হলেও কম দামে পাবেন, কিন্তু পরবর্তীতে এগুলোর বৈধতা ও ওয়ারেন্টি নিয়ে অনেক ঝামেলায় পড়তে পারেন।

আপনার যদি বাজেট কম হয়ে থাকে, এবং কম বাজেটের মধ্যে একটি ভালো ফোন নিতে চান ,তাহলে আপনাকে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনতে হবে। তবে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। আর তা হল :

• শারীরিক অবস্থা: সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ক্রয় করার সময় আপনাকে যেই বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হলো ফোনের বাহ্যিক এবং ভিতরের অবস্থা গুলো আসলে কেমন রয়েছে। স্ক্রিন, বডি, এবং পোর্ট গুলোতে কোন ধরনের ক্র্যাচ বা ক্ষত সে কিনা সেটি ভালো হবে দেখতে হবে। 
• ব্যাটারির অবস্থা: পুরাতন ফোন কেনার আগে আপনাকে ব্যাটারি ভালোভাবে চেক করে দেখে নিতে হবে। ব্যাটারীর ব্যাকআপ কেমন সেটি ভালোভাবে দেখতে হবে। 

• আই এম ই আই (IMEI) নম্বর: আপনি যে পুরাতন ফোনটি চেক করবেন তাতে যে আই এম ই আই (IMEI) নাম্বার দেওয়া আছে সেটি ভালোভাবে চেক করে নিতে হবে। কারণ স্মার্টফোনটি চোরাই কিংবা কোন অবৈধ পথে নেওয়া কি না। ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে আপনাকে। 
• ক্যামেরা ও স্পিকার: সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় আপনাকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ফোনের ক্যামেরা ও স্পিকার ঠিক আছে কিনা। 

আশা করি, এই স্মার্টফোন কেনার সম্পূর্ণ গাইডলাইন আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি সেরা স্মার্টফোন বেছে নিতে সাহায্য করবে। এবং মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার সেই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আপনি একটি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকরী ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন। 

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমাদের এই পোস্টটির বাহিরে আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই তা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। নিয়মিত এবং নতুন কিছু আপডেট পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।